
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নারীদের একটা অংশ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু পুঁজির অভাবে অনেকেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারছে না। থামি. পিননসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পোশাক প্রস্তুত করতে জানলেও শুধুমাত্র পুঁজি বা উপকরণের অভাবে তা প্রস্তুত করতে পারছেন না তারা।
পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে ঘুরে এসব অসহায় নারীদের ব্যক্তি উদ্যোগে থামি ,পিনন বুননের জন্য প্রয়োজনী সুতা,সেলাই মেশিন তুলে দিচ্ছেন তিনি। একই সঙ্গে মোড়া বানানোর জন্যও উপকরণ তুলে দিচ্ছেন তিনি। উপকরণ পেয়ে অনেকেই এখন উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে অনেকে থামি বিক্রি করে ৩০ থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত আয় করেছে।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার চ্যালাছড়া গ্রামের রূপা ত্রিপুরা যুগান্তরকে বলেন, আমাকে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন ম্যাডাম। এ সুতা দিয়ে আমি থামি পিনন বানিয়ে ইতোমধ্যে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। সবমিলিয়ে ৪০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারব।
একই গ্রামের কন্যা রানী ত্রিপুরা বলেন , ‘অর্থাভাবে আমরা সুতা কিনতে না পারায় থামি ,পিনন বুনন করতে পারিনি। তবে ম্যাডাম আমাদের সুতা দিয়ে সহযোগিতা করেছে। থামি বিক্রি করে এর মধ্যে আমরা ৩৫ হাজার টাকা পন্য বিক্রি করেছি। আমাদের ব্যবসা সফল হয়েছে। সংসারের খরচ মেটাতে পারছি।’
প্রথম পর্যায়ে নারীদের সাফল্যের পর নতুন করে আরো ৫০ জনকে সুতা ও মোড়া তৈরির উপকরণ দিয়েছেন তিনি। এসব উপকরণ পেয়ে আনন্দিত প্রান্তিক এলাকার এসব নারী।
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার কাজীপাড়ার বাসিন্দা মরিয়ম বিবি স্বামীকে হারিয়েছেন বেশ ক‘বছর আগে। ছেলেরা বিয়ে করে নিজের মতো করে বসবাস করছেন। স্বামীর ঘরেই একাকীত্ব জীবন কাটাচ্ছেন এ বিধবা নারী। স্বামীর মৃত্যুর পরে তার জীবনে নেমে আসে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। মোড়া তৈরি করে নিজের রুটি রুজির সংস্থান করেন।
মরিয়ম বিবির মতোই মোড়া বিক্রি করে সংসার চলে বিধবা বিবি ফাতেমা ও আনোয়ারা বেগমের। কিন্তু অর্থ সঙ্কটে মোড়া তৈরির উপকরণ কিনতে হিমশিম খেতে হয় তাদেরকে।
খাগড়াছড়ির সুবিধাবঞ্চিত এসব বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা ও অসহায় কর্মজীবি নারীদের প্রতি মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন গাজীপুর সরকারী মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন।
সহায়তার অংশ হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের প্রতিজনকে দশ জোড়া মোড়া তৈরির উপকরণ হিসেবে প্লাস্টিকের বেত (রগ) ও টায়ার প্রদান করেন তিনি।
মোড়া তৈরির উপকরণ পেয়ে স্বস্তির হাসি হেসে মরিয়ম বিবি বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পরে মোড়া তৈরি করে বিক্রি করেই নিজের নিজের ভরন-পোষনসহ সংসারের হাল ধরেছেন। কিন্তু আর্থিক সংকটে মোড়া তৈরির উপকরণ কিনতে পারেন না।
মরিয়ম বিবি বলেন, ম্যাডাম (ফেরদৌসী পারভীন) দশ জোড়া মোড় তৈরির উপকরণ দিয়েছেন। যার ফলে আমার একটা পুঁজি তৈরি হলো।
কোমর তাঁত বোনার সুতা পেয়ে ইন্দ্রানী ত্রিপুরা বলেন, আগেও ম্যাডাম পাহাড়ী নারীদের সুতা দিয়েছেন। তারা অনেকেই স্বাবলম্বি হয়েছে। আমরাও তাদের মতো করে ম্যাডামের সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়াবো।’
একজন নারী হিসেবে পাহাড়ে মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে সর্ম্পূণ ব্যক্তি উদ্যোগে এসব নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন।