সুকন্যাতে যারা কাজ করছেন, তাঁরা সবাই গ্রামীণ নারী অথবা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। এদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের। এখান থেকে হওয়া উপার্জন দিয়ে চলে তাঁদের সংসার। আবার এখানকার শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার খরচ চালান সেলাইয়ের টাকা দিয়ে। নিজের পণ্য-সমাহার নিয়ে সুরাইয়া বলেন, ‘মূলত সূচিশিল্পের পণ্য তৈরি করি আমরা। রাজশাহী সিল্কের ওপর হাতের সেলাই দিয়ে নকশিকাঁথা শাড়ি, থ্রিপিস তৈরি করি। এ ছাড়া হাতে বোনা তাঁতের কাপড়ের ওপর সেলাইয়ের মাধ্যমে লোকশিল্পের নানা মোটিফ তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমরা মূলত পোশাক-পণ্য তৈরি করি। পাশাপাশি শাড়ি, থ্রিপিস, কুর্তি, পাঞ্জাবি, ঘর সাজানোর সামগ্রীও তৈরি করি। এ ছাড়া যশোরের নকশিকাঁথা পরিচিতি বাড়াতে চাই আমরা।’
উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়ে কারও সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে সুরাইয়া বলেন, ‘আমার মা সব সময় আমার পাশে ছিলেন। প্রাথমিকভাবে গ্রামের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ, খোঁজ-খবর নেওয়া—সবই মা করতেন। আর্থিকভাবে সহযোগিতাও করেছেন মা। মা ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মারা যান। এখন ছোট বোন সব সময় ছায়ার মতো আমার পাশে আছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষীরা সার্বিকভাবে আমাকে সহযোগিতা করছেন।’
উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন কি-না জানতে চাইলে সুরাইয়া বলেন, ‘চলার পথে প্রায় সময় বিদ্রূপ ও অসম্মানের মুখোমুখি হচ্ছি। অনলাইন উদ্যোক্তা হওয়ার কারণে সাইবার বুলিং এবং নানা ধরনের হয়রানির স্বীকার হতে হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য, বার্তা আসে, যা শুধু নারী উদ্যোক্তা হওয়ার সুবাদে পেতে হয়। বর্তমানে দেশীয় পণ্যের মূল্যায়ন করা হয় কম। একটা হাতের কাজের পণ্য তৈরি করতে যে শ্রম আর উৎপাদন খরচ হয়, তার সঠিক মূল্যায়ন হয় না। অনেকের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা আছে যে, হাতে তৈরি পণ্যের দাম হবে খুবই কম। এ বিষয়টা মাঝেমধ্যে কষ্টের কারণ হয়।’
কিন্তু এসব বাধাবিপত্তিকে অবশ্য পাশ কাটিয়ে চলতে জানেন সুরাইয়া। তাঁর মতে, নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষত এসব মাথায় রেখেই কাজে নামতে হবে। সাহস আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে পথে নামতে হবে। সে পথই গন্তব্যে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আমিও এই যাত্রা মাত্র শুরু করেছি। আমাদের সমাজ নারী উদ্যোক্তাদের বড় ব্যবসায়ী হিসেবে গ্রহণ করতে পুরোপুরি প্রস্তুত না। সমাজ, পরিবারের নিয়মের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। সাহস করে উদ্যোগ নিলে কর্তব্যে দৃঢ় থাকলে নারীরা পারে না এমন কিছু নেই।’
সুকন্যার তৈরি হস্তচালিত তাঁতে তৈরি সুতি কাপড়ের পদ্মপুকুর শাড়ি। ছবি: সুকন্যার সৌজন্যে