চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় নিয়ে আসা ৭ কনটেইনার পণ্য জব্দ করেছে কাস্টমসের নিরীক্ষা, অনুসন্ধান ও গবেষণা (এআইআর) টিম। এসব পণ্য আমাদানির মাধ্যনে আড়াই কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করেছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পৃথক দুটি প্রতিষ্ঠান।
গত ১৮ ও ১৯ অক্টোবর শতভাগ কায়িক পরীক্ষার পর মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা এসব কনটেইনার জব্দ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস।
কাস্টমসের নিরীক্ষা, অনুসন্ধান ও গবেষণা (এআইআর) টিন জানায়, সম্প্রতি রাজধানীর ওয়াই ট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চীন থেকে ৪ কনটেইনার ক্যালসিয়াম কার্বনেট আমদানি করে। কাস্টমসের এআইআর টিন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করে এসব কনটেইনারে ঘোষণা- বহির্ভূত পণ্য রয়েছে বলে ধারণা করে। এসব পণ্য বিশেষ নজিরদারিতে রাখে তারা। নজরদারির বিষয়টি আঁচ করতে পেরে কনটেইনার চারটি সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য রিটার্ন অব বোর্ড (রোধ) ঘোষণা করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি।
এর মধ্যে কনটেইনারগুলো নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে এআইআর টিমের চাপে পণ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে রেখে যেতে বাধ্য হয় শিপিং এজেন্ট। পরবর্তী সময়ে ১৮ অক্টোবর কনটেইনার চারটি শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, কনটেইনারে থাকা সবকটি বস্তায় ক্যালসিয়াম কার্বনেট লেখা থাকেলেও সেখানে রয়েছে উচ্চ শুল্কের পণ্য। ৪০ মেট্রিক টন ঘোষণা করা হলেও কনটেইনারগুলোতে ক্যালসিয়াম যায় মাত্র তিন মেট্রিক টন। অন্য বস্তাগুলোতে ১৫ টন গুঁড়া দুধ, ৬০ টন ডেক্সট্রোজ, ১ টন কফি মেট ৩৩ টন মেনথল পাওয়া যায়।
মিথ্যা ঘোষণায় এসব পণ্য আমদানির মাধ্যনে দেড় কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করে ওয়াই ট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বরও একই প্রতিষ্ঠানের ৪টি কনটেইনার পণ্য জব্দ করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি ক্যালসিয়াম কার্বনেট ঘোষণায় গুঁড়া দুধ ও ডেক্সট্রোজ আমদানির মাধ্যমে ১ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করেছিল সেসময়।
এদিকে ২৭ সেপ্টেম্বর চীন থেকে ৩টি কনটেইনারে ৬০ টন সোডা অ্যাশ লাইট আমদানি করে চট্টগ্রামের সদরঘাট থানার ৪৬৪ ডিটি রোডের সামিনা ম্যানশনের মেসার্স আরাফাত ট্রেডিং নামের এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।
কাস্টমসের এআইআর টিন ও পোর্ট কনট্রোল ইউনিট (পিসিইউ) ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায়
বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করে এসব কনটেইনারে ঘোষণা-বহির্ভূত পণ্য রয়েছে বলে ধারণা করে। এতে কনটেইনার তিনটি নজরদারিতে রাখে তারা। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বিল অব এন্ট্রি দাখিল বা খালাসের উদ্যোগ নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের চৌকস এআইআর টিন ও পিসিইউর বিশেষ নজরদারির ফলে এই বিশাল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।
পরবর্তী সময় বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে কনটেইনার তিনটি শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে ভেতরে থাকা সবকটি বস্তায় সোডা অ্যাশ লাইট লেখা পাওয়া যায়। কিন্তু কায়িক পরীক্ষায় ৪০টি বস্তায় মাত্র ১ টন সোডা অ্যাশ লাইট পাওয়া যায়। বাকি বস্তাগুলোতে ৬০ টন ঘনচিনি, গুঁড়া দুধ, স্যাকারিন, সাইট্রিক অ্যাসিডসহ বিভিন্ন ফুড গ্রেডের পণ্য পাওয়া যায়, যা মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির মাধ্যমে ১ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছে।
কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার ডেপুটি কমিশনার মো. সাইফুল হক বলেন, ‘চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের চৌকস এআইআর টিন ও পিসিইউর বিশেষ নজরদারির ফলে এই বিশাল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। খাবার উপযোগিতা জানার জন্য ১৯ অক্টোবর জব্দ পণ্যগুলোর নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।”
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারের নির্দেশে পৃথক দুটি আমদানির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।