প্রকল্পে চুরি ধরার জন্য ড্রোন ব্যবহার করতে চাইলে অনুমতি লাগবে। ড্রোন ব্যবহারের এখনো অনুমতি মেলেনি। তাই এক বছর আগে ড্রোন কেনা হলেও তা প্রকল্প এলাকায় পুরোদস্তুর নজরদারির কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সে জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সব কর্মকর্তার জন্য ড্রোন ওড়ানোর অনুমতি নেওয়া হবে। অনুমতির জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে আইএমইডি ইতিমধ্যে আবেদন করেছে।
সম্প্রতি আইএমইডির এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আইএমএডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রশ্ন ওঠে, এই সংস্থার জন্য কেনা ড্রোন ব্যবহারে কোনো বিধিনিষেধ আছে কি না। তখন জানানো হয়, আইএমইডি উচ্চ প্রযুক্তির যে ড্রোন কিনেছে বা ভবিষ্যতে কিনবে, তা ব্যবহার করতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে।
আইএমইডির যেসব কর্মকর্তা ড্রোন চালাবেন, তাঁদের অনিয়ম-দুর্নীতি ধরার যে মানসিকতা, সেটির পরিবর্তন করা জরুরি। তাঁদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে ড্রোন ব্যবহার করে লাভ হবে না।
তিনি আরও বলেন, আকাশ থেকে প্রকল্প দেখতে হবে কেন? হেঁটে-চলে, কাগজপত্র ঘেঁটেই তো প্রকল্পের অনিয়ম দুর্নীতি ধরা যায়।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সাবেক সচিব ও বড় অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আইএমইডির সব কর্মকর্তার নাম-পদবি উল্লেখ করে বেবিচকের কাছে অনুমতির জন্য আবেদন করা হবে। ইতিমধ্যে অবশ্য আবেদন করা হয়ে গেছে। আইএমইডি সূত্রমতে, কর্মকর্তাদের ড্রোন ব্যবহারে এখনো অনুমতি পাওয়া যায়নি। তবে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আইএমইডিকে তিনটি ড্রোনের নিবন্ধন দিয়েছে বেবিচক। শিগগিরই কর্মকর্তাদের ড্রোন ওড়ানোর অনুমতি মিলবে বলে আশা প্রকাশ করছেন কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, আইএমইডির মূল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোট ১১৪ জন কর্মকর্তা আছেন। তাঁদের সবার জন্য ড্রোন ব্যবহারের অনুমতি নেওয়া হবে।
এক বছরের বেশি সময় আগে আইএমইডি প্রকল্প পরিদর্শন ও নজরদারির জন্য ড্রোন ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতা, প্রশিক্ষণের অভাবসহ নানা কারণে সংস্থাটির কর্মকর্তারা পুরোপুরি ড্রোন ব্যবহার করতে পারছেন না।
আইএমএইডি সূত্রমতে, ২০২২ সালের মে মাসে ডিজেআই ব্র্যান্ডের ফ্যান্টম ও মেভিক মডেলের তিনটি ড্রোন কিনেছে সংস্থাটি। প্রতিটি ড্রোনের দাম পড়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা।
পাঁচ কেজির বেশি ওজনের ড্রোন ওড়াতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অনুমোদন লাগে। এমন উচ্চ প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করার পরিকল্পনাই করেছে আইএমইডি।
এ বিষয়ে সাবেক সচিব ও বড় অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, আইএমইডির যেসব কর্মকর্তা ড্রোন চালাবেন, তাঁদের অনিয়ম-দুর্নীতি ধরার যে মানসিকতা, সেটির পরিবর্তন করা জরুরি। তাঁদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে ড্রোন ব্যবহার করে লাভ হবে না। তিনি আরও বলেন, আকাশ থেকে প্রকল্প দেখতে হবে কেন? হেঁটে-চলে, কাগজপত্র ঘেঁটেই তো প্রকল্পের অনিয়ম দুর্নীতি ধরা যায়।
সবাই প্রশিক্ষণ পাবেন
ড্রোন ব্যবহার করা খুবই সংবেদনশীল ও কারিগরি বিষয়। তাই এটি পরিচালনায় প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সীমিত পরিসরে আইএমইডি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। মূলত আইএমইডি কর্মকর্তাদের মধ্যে যাঁরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ড্রোন চালানো শিখেছেন, এমন দুই-তিনজন কর্মকর্তাই প্রশিক্ষণ দেন। এভাবে এখন পর্যন্ত কয়েক দফায় ২৫-২৬ জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।
সম্প্রতি আইএমইডির সভায় সব কর্মকর্তাকে ড্রোন পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সমস্যা হলো, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আশপাশে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় না। কারণ, জায়গাটির আশপাশে পুরোনো বিমানবন্দর, জাতীয় সংসদ, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনসহ বেশ কিছু অতিগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। তাই ছুটির দিনে পূর্বাচল কিংবা মুন্সিগঞ্জে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
পরীক্ষামূলকভাবে চলছে ড্রোন ব্যবহার
তিনটি ড্রোন দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কিছু প্রকল্পে সীমিত পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে পরিদর্শন ও নজরদারি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রতি মাসে দু-একটি প্রকল্প পরিদর্শনকালে ড্রোন নেওয়া হয়।
আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে আরও দুটি ড্রোন কিনবে তারা। এ জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ড্রোন প্রশিক্ষণ ও ব্যবহার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত আইএমইডির এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের চুরি ধরতে ড্রোন প্রযুক্তি বেশ কার্যকর। পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি প্রকল্পে এমনভাবে কিছু অনিয়ম ধরা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাপকভাবে ড্রোন ব্যবহার করা গেলে প্রকল্পে অনিয়ম কমে যাবে।