
ডলারের দাম, ফিড ও ওষুদের আমদানি খরচ, জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি, পণ্য খালাসে কাস্টমস জটিলতা এবং অভ্যন্তরীণ পরিবহণ ভাড়া বাড়ার কারণে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে আমিষজাতীয় পণ্য দুটির দামে। এমন পরিস্থিতিতে ফিড ও ওষুধ আমদানিতে শুল্ক ছাড়সহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দরকার। তাতে অচিরেই মুরগি ও ডিমের দাম কমে আসবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত মিট দি প্রেস অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যৌথভাবে ইআরএফ এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। এতে পোল্ট্রি শিল্পের ব্রয়লার উৎপাদন, ফিড, কেমিক্যাল, ডিম উৎপাদনসহ সংশ্লিষ্ট সাতটি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিপিআইসিসির সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, ‘ডলারের কারণে সব পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। খাদ্য ও ওষুধের দাম বেড়েছে। এতে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। ফলে গত প্রায় দুই বছর ডিম-মুরগিতে খামারিরা লোকসান করেছেন। উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। কিন্তু উল্টো খামারি ও উদ্যোক্তাদের অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। অথচ অনায্য মুনাফা করেছে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা।’
খামারি কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি দেখা দিলেই বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। খুঁজে বের করতে হবে কারা এর সঙ্গে জড়িত। তাছাড়া তবে কিছু খাদ্য পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমালে ডিম-মুরগির দাম কমবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দরকার।’
ডিম-মুরগির বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই বলে দাবি করেন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি কাজী জাহিন হাসান। তার মতে, সিন্ডিকেটের অভিযোগ ভিত্তিহীন। ডিম-মুরগির দাম কেউ নিয়ন্ত্রণ করে না। এটি নির্ভর করে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। কারণ প্রতিদিনই ডিম কমবেশি উৎপাদন হচ্ছে। খামারি ডিম মজুদ করে রাখতে পারবে না। মজুদ বেশি হলে বরং কম দরে বিক্রি করতে হয়। তবে বড় কোম্পানিগুলো দৈনিক যে দরে বিক্রি করে প্রান্তিক খামারিরা সেই দর অনুসরণ করে। এতে বড় খামারিদের তো দয় নেই।’
ডিম-মুরগি আমদানি করলে শুধু খামার নয় দেশেরই ক্ষতি হবে মন্তব্য করে কাজী জাহিন হাসান বলেন, ‘গত বছর কয়েকদিন ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় গ্রাম থেকে শহরে ডিম আসতে দেরি হয়েছে। তাছাড়া গরমে মুরগি পানি বেশি খায়, ফিড খায় কম। এতে ডিমের উৎপাদন কমেছে। দাম বৃদ্ধিতে এসবের ভূমিকা ছিল।’
বিএবি সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘ডিম ও মুরগির খামারিদের নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা এ খাতকে আরও অস্থির করে তুলছে। একদিন বয়সি ব্রয়লারের বাচ্চার সাপ্তাহিক চাহিদা ছিল প্রায় এক কোটি ৭০ থেকে ৮০ লাখ, বর্তমানে তা এক কোটি ৩০ লাখে নেমেছে। লেয়ার মুরগির চাহিদা ১১ লাখ থেকে কমে হয়েছে সাড়ে ৯ লাখ। একটি স্বার্থান্বেষী মহল দেশি পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংসের লক্ষ্যেই করপোরেট ও প্রান্তিক খামারির মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করছে। এদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’
ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (এফআইএবি) সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘৬০ থেকে ৭০টি পণ্যের সমন্বয়ে ফিড তৈরি হয়। এগুলোর ৬০ শতাংশ উপকরণই আমদানি করতে হয়। কিন্তু যুদ্ধের কারণে ভূট্টা, সয়াবিন মিলসহ ফিড তৈরির অন্যান্য উপকরণ এবং ওষুধের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। ডলার সংকটে এলসি খোলা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম কাস্টমসে এনওসি দিয়ে আমদানি করা ফিড গ্রেড পণ্যকেও ফুড গ্রেড লেবেল দিয়ে উচ্চহারে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। আবার মিস-ডিক্লারেশনের অভিযোগে একই সাথে ২০০ শতাংশ জরিমানা করা হচ্ছে। সাগরে কয়েকটি জাহাজ ভাসছে। এতে প্রতিদিন হাজার হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এসব কারণেও উৎপাদন খরচে লাগাম টানা যাচ্ছে না।’
এনিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আহকাব) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আফতাব আলম বলেন, ‘মুনাফার চেয়েও অনেক কম লাভ করা সত্ত্বেও হেনস্তা হচ্ছেন উৎপাদক-খামারিরা।’ এর জন্য মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দায়ী করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার সহ-সভাপতি তৌহিদ হোসেন, বাংলাদেশ এগ্রো ফিড ইনগ্রিডিয়েন্টস ইম্পোটার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জয়ন্তু কুমার দেব, ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম প্রমুখ।