
দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সেই সঙ্গে একের পর এক রেকর্ড করছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা। হাসপাতালগুলোয় রোগীর জন্য পাওয়া যাচ্ছে না বেড, কেবিন বা আইসিইউ। এমন পরিস্থিতি দেশে মুখে খাওয়ার স্যালাইনের সংকট দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে এই সুযোগে অতিরিক্ত ব্যবসা ও মুনাফা করে নিচ্ছে একদল দুষ্ট ডাব বিক্রেতা। জায়গা ও আকারভেদে প্রতিটি ডাব হতে ২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করছে তারা। বেশি মুনাফা করছে হাসপাতগুলোর সামনে, যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে এবং রোগীর সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পিজি ও বারডেম হাসপাতাল। এছাড়া বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরেও এমন চিত্র দেখা গেছে। হাসপাতালগুলো ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ভ্যানগাড়ি ও টং দোকানে বিক্রিতেও কিছুটা অতিরিক্ত মুনাফা করতে দেখা যায়।
সরেজমিনে পাইকারি ও খুচরা ডাব বিক্রির বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, বর্তমানে পাইকারিতে আকারভেদে ডাব প্রতিটি ৬০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ছোট আকারের ১০০টি ডাবের দাম নেয়া হচ্ছে ছয়-সাত হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে প্রতিটির দাম দাঁড়ায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আর মাঝারি আকারের ডাবের ‘শ’ বিক্রি হচ্ছে আট-নয় হাজার টাকায়। ফলে প্রতিটি মাঝারি আকারের ডাবের পাইকারি দাম পড়ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এছাড়া পাইকারি বাজারে বড় আকারের ১০০টি ডাবের দাম নেয়া হচ্ছে ১০-১২ হাজার টাকা। এতে প্রতিটি বড় আকারের ডাবের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের একজন পাইকারি ডাব বিক্রেতা নাম না প্রকাশের শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, ডাবের দাম আগের থেকে কিছুটা কমেছে। গত ১৫ দিন থেকে এক মাস আগে ডাবের দাম অনেক বেড়েছিল। তখন বড় ডাবের ‘শ’ ছিল ১৪-১৫ হাজার টাকা। আর মাঝারি ডাব ১০-১২ হাজার টাকা এবং ছোট ডাব ৮-৯ হাজার টাকা ‘শ’ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন কিছুটা কমেছে। বর্তমানে বড় ডাবের ‘শ’ ১০-১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাকি দুই সাইজের দামও ‘শ’-প্রতি দুই-তিন হাজার টাকা কমেছে।
এদিকে মিরপুরে পাইকারি ডাব বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, ডেঙ্গুর অবস্থা খারাপ হওয়ার পর থেকে ডাবের দাম অনেক বেড়েছে। যে বড় ডাব আগে ‘শ’ বিক্রি হতো ৮-৯ হাজার টাকা, সেগুলো এখন ১০ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট ও মাঝারি সাইজের ডাবও ‘শ’-প্রতি দুই হাজার টাকার বেশি বেড়েছে।
চাহিদা অনুযায়ী ডাব সাপ্লাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডেঙ্গুর কারণে আগের থেকে চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সাপ্লাই কিছুটা কমেছে। তবে খুব বেশি কম ডাব ঢাকায় আসে না। দেশের সব জায়গা থেকে ডাব এলেও ভোলা থেকে সবচেয়ে বেশি আসে বলে জানান তিনি।
এদিকে খুচরা বাজারে দেখা গেছে, ভ্যানগাড়িতে ছোট সাইজের ডাব প্রতিটি ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, মাঝারি সাইজের ডাব প্রতিটি ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় এবং বড় সাইজের ডাব ১৮০ থেকে ২০০ টাকা প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া টং দোকানে বড় সাইজের প্রতিটি ডাব ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, মাঝারি সাইজের প্রতিটি ডাব ১৫০ টাকায় এবং ছোট সাইজের ডাব ১২০ টাকায় প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে হাসপাতালগুলোর সামনে চলমান ডেঙ্গু আতঙ্কের বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মুনাফা করছে ডাব ব্যবসায়ীরা। এতে ক্রেতাদের মাথায় তারা এক ধরনের বাড়িই দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। হাসপাতালগুলোর সামনে ডাবপ্রতি ২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করছে তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালগুলোর সামনে বড় সাইজের ডাব প্রতিটি ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ছোট সাইজের ডাব প্রতিটি ১৫০ টাকায় এবং মাঝারি সাইজের ডাব প্রতিটি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের সামনে ডাব বিক্রি করা একাধিক খুচরা বিক্রেতা বলেন, ডেঙ্গুর কারণে এখন ডাবের চাহিদা অনেক। তাই পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা অল্প লাভে বিক্রি করি। কেনা ও আনাসহ ডাবের যে দাম পড়ে, তার থেকে প্রতিটিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভ করি।
পাইকারি থেকে তারা ২০ থেকে ১৫০ টাকা লাভ করছেন-এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, এটা সত্যি কথা নয়। আমরা এত লাভ করতে পারি না। প্রতি ডাবে ২০ টাকা লাভ করতেই কষ্ট হয়ে যায়। এটা পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেশি দাম নিয়ে আমাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের বিশ্বাস না হলে ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখেন।
এদিকে বেশি দামে ডাব বিক্রি করার বিষয়ে জানতে চাইলে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা একে অপরকে দোষারোপ করেন।