বাজারে আরও এক দফা দাম বেড়েছে আলু ও পেঁয়াজের। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি আলু ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১১০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজে ২০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে সপ্তাহের শুরুর তুলনায় গত দুই দিনে শাকসবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এর পরও বেশিরভাগ সবজি ৮০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া ডিম ও মুরগির দাম বাড়তির দিকে। মাছ- মাংসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে। তবে ২৮ অক্টোবর ঘিরে রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থাকলেও বাজারে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি নেই। ফলে ক্রেতারা প্রয়োজনে অতিরিক্ত কেনাকাটা করছেন না বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে দিনাজপুর হিলি স্থলবন্দর আমদানি- রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি এম হারুন উর রশিদ বলেন, পূজার ছুটির কারণে দাম বেড়েছে, বিষয়টি এমন নয়। ভারতে পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে বলে তাদের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এজন্য তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম ব্যাপক বেড়েছে। ভারতের পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ৪৫ রুপি পর্যন্ত কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে সে দেশের পরিবহন খরচ ও শুল্ক রয়েছে। এ পাড়ে বন্দর ও অন্যান্য খরচসহ প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা পড়ছে। দামবৃদ্ধির কারণে আমদানিকারকরা বিকল্প বাজারে যোগাযোগ করছেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা একই তথ্য জানিয়েছেন। তবে দাম বাড়লেও বাজারে পণ্যটির ঘাটতি নেই বলে তারা জানিয়েছেন। অপরদিকে দেশে পর্যাপ্ত আলু মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম বৃদ্ধির বিষয়ে খাত সংশ্লিষ্টরা কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না।
শুধু বলছেন, গত দুই বছরে লোকসান মেটাতে দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে হিমাগার সমিতির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যথাযথ তদারকির অভাবে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন।
জানা গেছে, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে সাড়ে ১০ টাকা। দুই-তিন হাত বদল হয়ে হিমাগার খরচসহ প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ছে ২০ টাকা, যা হিমাগার পর্যায়ে ২৭ টাকা বিক্রি করা সম্ভব হলেও বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা বা তারও বেশি দামে। পাইকারি হয়ে খুচরা পর্যায়ে পৌঁছাতে যাতে আরও ২০ টাকা যোগ হচ্ছে।
কাঁচাবাজারে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালীন সবজির পাশাপাশি বাজারে যুক্ত হয়েছে প্রায় সবধরনের শীতের সবজি। সপ্তাহের শুরুতে প্রতি পিস ফুল ও বাঁধাকপি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। গত দুই দিনে প্রতি পিসে ২০ টাকা কমে আকারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে কেজিতে ২০ টাকা কমলেও প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়, ১০ থেকে ২০ টাকা কমে প্রতি কেজি চিচিঙ্গা, ধুন্দল ও ঝিঙা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। একইভাবে দাম কমলেও পটোল, ঢ্যাঁড়শ, বড় করলা, দেশি গাজর, কচুর মুখী, লতির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এ ছাড়া ছোট করলা, বরবটি, কাকরোল, চায়না গাজরের কেজি ১০০ টাকা এবং নতুন শিমের কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা টমেটোর দাম আরও বেড়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।
ক্রেতারা বলছেন, সবজির দাম এখনো ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। সরকারি হিসাবে এসব সবজি উৎপাদনে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ছে ৯ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত। কাঁচামরিচের কেজিতে উৎপাদন খরচ ৪০ টাকার কিছু বেশি। অপরদিকে বাজারে সরকার নির্ধারিত ১২ টাকায় ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে পৌনে ১৪ টাকা। প্রতি হালি ৫৫ টাকা এবং এক ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির কেজি ৬০০ টাকা এবং সোনালি বা কক মুরগির কেজি ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া মাছের মধ্যে আকারভেদে রুই-কাতলার কেজি ২৬০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং তেলাপিয়া, পাঙাশের কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। চাষের কৈ, পাবদা ও শিং মাছের কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, লইটা মাছের কেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, টেংরা মাছের কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং আকারভেদে চিংড়ি মাছের কেজি ৫৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।