ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কোম্পানিগুলো ২০২৪ সালের প্রথম ভাগে ৫০০ বিলিয়ন বা ৫০ হাজার কোটি ডলার পুনঃ অর্থায়নের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এ কারণে এসব অঞ্চলের অনেক ঋণনির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যদিও নীতি সুদহার প্রত্যাশিত চূড়ান্ত পর্যায়ে ওঠার কারণে কিছুটা স্বস্তি এসেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, বহুদিন ইউরোপ ও আমেরিকায় সুদের হার ছিল খুবই কম। কিন্তু এখন সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিগুলোর পক্ষে অর্থ জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যাংকগুলোও কঠোর নিয়মকানুনের নিগড়ে পড়ে ঝুঁকির রাশ টানার চেষ্টা করছে।
ঋণ পুনর্গঠনবিষয়ক পরামর্শক কোম্পানি আলভারেজ অ্যান্ড মার্শালের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এখন থেকে ২০২৫ সালের শেষভাগের মধ্যে যত ঋণ ও বন্ডের মেয়াদ শেষ হবে, তা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ এ সময়ে বিপুল পরিমাণে ঋণ পরিশোধ করতে হবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনে ঋণসংকট। ছোট ছোট যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নতুন বেসরকারি ঋণ খুঁজছে, তাদের সংখ্যা সারা বিশ্বেই বাড়বে।
যে সুদহারে ঋণ নিয়ে তারা ব্যবসা করতে পারে, সেই হারে ঋণ না পেলে অনেক কোম্পানি অসচ্ছল হয়ে যেত পারে। পরিণামে এসব কোম্পানির অনেক কর্মী ছাঁটাই হতে পারেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ছোট ছোট ঋণনির্ভর কোম্পানিগুলোর জন্য ঋণের সুদহার বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যারা স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে কোনো রকমে ঋণ পরিশোধ করতে পারত, সেই সুযোগ তারা আর পাচ্ছে না। তাই এমন অনেক কোম্পানির পতনের সময় চলে এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ইতিমধ্যে দুর্দশার চিহ্ন ফুটে উঠতে শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকসের তথ্যানুসারে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলস অঞ্চলে করপোরেট অসচ্ছলতার হার আগের বছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাজ্যের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বেগবিস ট্রেইনরের ত্রৈমাসিক রেড ফ্ল্যাগ প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশটিতে ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৭০২টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে বড় ধরনের চাপের মুখে ছিল, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
ব্রিটেনের খুচরা বিক্রেতা উইলকো ছাড় দেওয়ার জন্য বিখ্যাত। চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে এই খুচরা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ধসে পড়েছে, যা এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে।
ফ্রান্সের ষষ্ঠ বৃহত্তম খুচরা প্রতিষ্ঠান ক্যাসিনো দেউলিয়াত্ব এড়াতে এই কেবল ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন করেছে। রিজেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিকোলা মারিনেল্লি রয়টার্সকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যে আর নীতি সুদহার বৃদ্ধি করবে না, তা নয়। বরং তারা এখন কিছুটা বিশ্রাম নিচ্ছে।
নিকোলো মারিনেল্লি আরও বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আশা করছিল যে নীতি সুদহার বৃদ্ধির ধারা থামবে, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। তাই এখন আর তাদের পক্ষে উচ্চ সুদহারের প্রভাব লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ইতিমধ্যে সতর্কতা জারি করেছে যে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, যে আশঙ্কা তাদের মোটেও খাটো করে দেখা উচিত হবে না। এ ছাড়া তারা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আরেকটি পরামর্শ দিয়েছে। সেটা হলো, যেসব ঝুঁকি বিশ্লেষণ মডেল খাতভিত্তিক বিশ্লেষণ করে থাকে, তাদের ওপর নির্ভর না করে কোম্পানিভিত্তিক বিশ্লেষণ করা।
২০০৯ সালের পর চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে সর্বোচ্চসংখ্যক কোম্পানি অসচ্ছল হয়ে গেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, একটি বড় ব্যাংক প্রতি মাসে গড়ে ১০০টি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন পাচ্ছে, দেড় বছর আগেও যা ছিল মাসে ১০টি।
ইংল্যান্ডের আরেকটি বড় ব্যাংক দুর্দশাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবায় শত শত কর্মীকে নিয়োজিত করছে। সামগ্রিকভাবে যুক্তরাজ্যে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ খেলাপি হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।