
ঘরে জ্বলেনি চুলা। খাবারের জন্য হোটেল-রেস্তোরাঁয় হুমড়ি খেয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ। তবে হোটেল-রেস্তোরাঁয়ও ছিল একই অবস্থা। দিনের বেশিরভাগ সময় চুলা জ্বলায় সেখানেও তৈরি হয়েছে সংকট। ফলে অনেকের দিন কেটেছে চিড়া বা বন-পাউরুটি খেয়েও।
স্থানীয়দের দাবি, গতকাল শনিবার সকাল ১১টা থেকেই সংকট তৈরি হয় গ্যাসের। দুপুর গড়াতেই তা জানাজানি শুরু হয়। এরপর হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে দেখা যায় ব্যাপক ভীর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সংকটে কাটতে সময় লাগতে পারে কিছুদিন।
এদিকে এলএনজি সরবরাহ ঠিকভাবে না হওয়ায় শনিবার গ্যাসের এমন সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) বিভাগের বিতরণ কাস্টমার শাখার মেইনটেন্যান্স ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুছ। ব্যবসাপাতিকে তিনি বলেন, ‘জিটিসিএল (গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড) থেকে আমরা শনিবার সরবরাহ পেয়েছি ২৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। অথচ আমাদের চাহিদা হলো ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে কাফকো- সিইউএফএলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এরপরও ৩২০-৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট পেলে স্বাভাবিক রাখা যায়।’
আরপিজিসিএলে সম্ভবত কোনো টেকনিক্যাল সমস্যা হয়েছে। তাই সাপ্লাই ঠিকভাবে হচ্ছে না।
জিটিসিএল সরবরাহ কম আসার কারণ জানতে চাইলে কাস্টমার মেইনটেন্যান্স শাখার ব্যবস্থাপক বলেন, ‘জিটিসিএল তো মূলত সাপ্লাইয়ার। আরপিজিসিএল (রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড) থেকে জিটিসিএল যতটুকু পায়, ততটুকু সরবরাহ করে। আরপিজিসিএলে সম্ভবত কোনো টেকনিক্যাল সমস্যা হয়েছে। তাই সাপ্লাই ঠিকভাবে হচ্ছে না।’
আরপিজিসিএল সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে কাতারের রাস লাফান লিকুইফিড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরএলএনজিসিএল) সঙ্গে ১৫ বছর মেয়াদে এবং ২০১৮ সালের ৬ মে ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের (ওটিআই) সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদে চুক্তি হয়। এরমধ্যে কাতারের প্রতিষ্ঠানটি ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমটিপিএ) এবং ওমানের প্রতিষ্ঠানটি ১ থেকে ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিকটন (এমটিপিএ) এলএনজি প্রতিবছর সরবরাহ করে। চলতি বছরে আরএলএনজিসিএল ৩১টি এবং ওটিআই ১৩টি কার্গো সরবরাহ করে। এর বাইরে অনুমোদিত ২১টি প্রতিষ্ঠান থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস সংগ্রহ করে আরপিজিসিএল।
আমরা লং টার্মে যে কার্গোগুলো আনি সেগুলোর একটা নির্দিষ্ট মাত্রা আছে । চাইলে চুক্তির বাইরে বেশি গ্যাস কার্গো আনা সম্ভব নয়।
মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ কবির, উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী, এলএনজি বিভাগ, আরপিজিসিএল
গ্যাস সংকটের কারণ জানতে চাইলে আরপিজিসিএলের এলএনজি বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ কবির বলেন, ‘এখন মজুদের কিছুটা সংকট আছে। পরবর্তী শিডিউলের সঙ্গে ব্যালেন্স করে এখন কিছুটা কমিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই পিক আওয়ারে (সকাল ৯টা থেকে দুপুরে ২টা) কিছুদিন সংকট থাকবে। আমরা লং টার্মে যে কার্গোগুলো আনি সেগুলোর একটা নির্দিষ্ট মাত্রা আছে । চাইলে চুক্তির বাইরে বেশি গ্যাস কার্গো আনা সম্ভব নয়। এজন্য আমরা স্পট মার্কেট থেকেও নিয়ে থাকি। তবে এবারের টেন্ডারে দাম বেশি হওয়ায় আমরা নিতে পারিনি। তাই রি-টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি, স্পট মার্কেট থেকে কার্গো পেয়ে যাবো।
ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে গ্যাসের আর সংকট থাকবে না।
কার্গো পেলে গ্যাস সংকট থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বছরে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। এলএনজি টার্মিনালের মেইনটেন্যান্সের জন্য ড্রাইডকে নিতে হবে। পাঁচ বছর পর পর মেইনটেন্যান্সের কাজ করতে হয়। নতুবা কোনো কার্গো আর আমাদের টার্মিনালে ভিড়বে না। এবার প্রথমবারের মতো টার্মিনাল ড্রাই ডকে পাঠানো হবে নভেম্বরের মাঝামাঝি। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি মেইনটেন্যান্সের কাজ শেষে ফিরে আসবে। এ সময় পর্যন্ত কিছুটা ভোগান্তি থাকবে। আশা করছি ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে গ্যাসের আর সংকট থাকবে না।’
৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কম ক্রয়াদেশ নিয়ে আমরা এখন ব্যবসা করছি। এরমধ্যে জ্বালানিখাতে কোনো সংকট হলে আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হবে