নবায়নযোগ্য জ্বালানি: বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ৮ প্রস্তাব

বিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশও এর ব্যবহার বাড়াতে যথেষ্ট আগ্রহী। এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগের পাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে এই বিনিয়োগ বাড়ানোর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনসহ ৮ প্রস্তাব দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।

সোমবার ‘বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ: চায়নার কেস স্টাডি’ শীর্ষক ভার্চুয়াল ডায়ালগে সিপিডি এসব প্রস্তাব তুলে ধরে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মাশফিক আহসান হৃদয়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন এই ভার্চুয়াল ডায়ালগে অংশ নেন।

এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনাও রয়েছে।

মূল প্রবন্ধে মাশফিক আহসান হৃদয় জানান, গত ১৩ বছরে দেশের জ্বালানি খাতে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে। তবে বেশিরভাগ বিনিয়োগই হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানিকেন্দ্রিক। অন্যদিকে বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ ৩০ শতাংশ ও ২০৪১ সাল নাগাদ ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করতে আগ্রহী। এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনাও রয়েছে।

তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য কর ছাড়সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয় বাংলাদেশ সরকার। তবে বিনিয়োগকারীরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সেবা প্রাপ্তিতে ধীরগতিসহ একাধিক জটিলতার সম্মুখীন হন। তা সত্ত্বেও জ্বালানি খাতে ২০২২ সালে ৩ হাজার ৪৭৯ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, যা তার আগের সিপিডির বছরের তুলনায় ২০ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।

১৩ বছরে জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ ৩০ বিলিয়ন ডলার

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রস্তাবে তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বমানের প্রকল্প প্রোফাইল তৈরি করে ভেস্টাস, সিমেন্সের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, বিড়া ছাড়াও আরেকটি বিনিয়োগ আকৃষ্ট এজেন্সি তৈরি করা, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের জন্য সরকারের বিনিয়োগ বৃদ্ধি (পিপিপি পদ্ধতির অধীনে হতে পারে), বিনিয়োগকারীদের হয়রানি কমাতে ওয়ান স্টপ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিস সেন্টার, অবকাঠামোর উন্নয়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুবিধার্থে চাকরি প্রার্থীদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়া, ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ আনা ও বাংলাদেশে বিদ্যমান ১৭৭টি এসএমই ক্লাস্টারের উন্নয়নে ক্লাস্টার-ভিত্তিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে।

সংকট মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দেয়া জরুরি – শেয়ার বিজ

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ অনেক। বেল্টের আওতায় এক ধরনের কো-অপারেশন হতে পারে। এ ধরনের আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা শুধু বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগই আনবে না, পাশাপাশি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির যে লক্ষ্যমাত্র রয়েছে তা পূরণে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে অবদান রাখছে এবং আগামীতেও রাখবে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কারিগরি সহায়তা দেবে চীন।

এর আগে স্বাগত বক্তব্যে গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ রয়েছে। তবে তারা জানে না যে কীভাবে এই দেশে বিনিয়োগ করতে হবে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে ছোট ছোট বিনিয়োগকারীরা ভ্যাট, ট্যাক্স সংক্রান্ত নানা ঝামেলায় পড়ছেন। এগুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ঝামেলার কারণ হতে পারে।

তিনি বলেন, আইন-কানুনে অনেক জটিলতা রয়েছে, যেগুলোর কারণে বিনিয়োগকারীরা যথাযথ সুবিধা পাচ্ছেন না। সে জায়গাগুলোতে নীতিনির্ধারকদের কাজ করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়েশা খান বলেন, বর্তমান সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অনেক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। তবে আমরা লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে আছি। দেশে বিনিয়োগের যথাযথ পরিবেশ রয়েছে। তবে আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আমরা যেন আবার পুরোনো প্রযুক্তির ভারে ভারাক্রান্ত না হই। এজন্য এখানে নতুন নতুন প্রযুক্তি আনতে হবে। সেটা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রেও।