
পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ও সুষ্ঠভাবে বাজেট বাস্তবায়ন এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বলেছে, রাজস্ব আহরণ ও সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই।
বছরভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করলেও সময়মতো ও সুষ্ঠুভাবে বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে না, ফলে এখনো এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ উত্তরণে কতিপয় নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার একটি প্রধান কারণ হচ্ছে রাজস্ব আহরণ ও সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজেট বাস্তবায়ন সাধারণত অর্থবছরের প্রথম দিকে ধীরগতিতে চলে। একইভাবে অর্থবছরের শুরুতে রাজস্ব আদায়ে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়।
অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা ছাড়া অন্যান্য সব আইটেমের বিপরীতে ব্যয়ের পরিমাণও কম থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মেরামত সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পূর্ত কাজ এবং মালামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষ দিকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।
উপরন্তু বছরের শেষে এসে সরকারকে অপরিকল্পিত ঋণের দায়ভার গ্রহণ করতে হয়। এতে আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না। এ অবস্থায় বাজেট সুষ্ঠুভাবে ও সময়মতো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে অপরিকল্পিত সরকারি ঋণ এড়ানো এবং সরকারের ঋণজনিত ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা সম্ভব।
এ পরিস্থিতিতে বাজেট সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে অর্থবছরের শুরুতেই প্রান্তিকভিত্তিক (তিন মাস) বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, যথাযথভাবে সেটি বাস্তবায়ন এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বাজেট বাস্তবায়নের অগ্রগতি পরিবীক্ষণের জন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে আগামী ৮ অক্টোবরের মধ্যে তাদের বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে। পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রতিবেদন তৈরিতে বিভিন্ন ফরমও তৈরি করে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এছাড়া প্রত্যেক প্রান্তিক শেষ হওয়ার পরবর্তী এক মাসের মধ্যে বাজেট বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।
সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে জারিকৃত ‘বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিবীক্ষণ’ শীর্ষক এক পরিপত্রে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাজেট ও অর্থ বিভাগের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাধারণভাবে কোনো অর্থবছরেই পুরো বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এমনকি সংশোধিত বাজেটও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। গত পাঁচ বছরে মূল বাজেটের গড়ে ৮১ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের গড়ে ৮৭ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।
সমাপ্ত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে অর্ধেকেরও কম বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে। আলোচ্য সময়ে (জুলাই ২০২২-মার্চ ২০২৩) বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মূল বাজেটের ৪৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের ৪৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর আকার ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর বিপরীতে ৯ মাসে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা।
পরিপত্রে বলা হয়,
প্রতি বছর বাজেটে কিছু নতুন নীতি, কর্মসূচি, কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়। গত তিন বছরে ঘোষিত কার্যক্রমগুলোর মধ্যে কিছু এখনো বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এছাড়া চলতি বাজেটেও কিছু কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো যথাসময়ে ও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রদত্ত ফরম ব্যবহার করে বাস্তবায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।