বর্তমান সময় তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সংকটকাল বলে দাবি করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। গার্মেন্ট উদ্যোক্তাদের ভাষায়, ‘ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে যা পাচ্ছি তা-ই অর্ডার নিচ্ছি।’ তবে এই অর্ডার রপ্তানি করতে গিয়ে কাস্টমস এবং বন্ডের বাধায় পড়ছেন বলে তাঁদের অভিযোগ। তাঁরা বলছেন, রপ্তানির ঠিক আগ মুহূর্তে কার্টন থেকে পণ্য বের করে ওজন করার পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানিতে এইচএস (হারমোনাইজড সিস্টেম) কোড নিয়ে কাস্টমস জটিলতা সৃষ্টি করছে।

চট্টগ্রামের তিন থেকে চারটি প্রাইভেট আইসিডিতে কাস্টমসের এ ধরনের হয়রানি চলছে বলে বিজিএমইএর অভিযোগ।

বিজিএমইএর অভিযোগ, প্রাইভেট আইসিডিগুলোতে রপ্তানিযোগ্য গার্মেন্ট পণ্যের কার্টন খুলে প্রতিটি আইটেম ওজন করছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে বিল অব এন্ট্রি এবং বিল অব এক্সপোর্টের নথির সঙ্গে পণ্যের বিবরণও মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।

আর কাস্টমসের এই কাজটিকে হয়রানি হিসেবেই চিহ্নিত করেছে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ। চট্টগ্রামের তিন থেকে চারটি প্রাইভেট আইসিডিতে কাস্টমসের এ ধরনের হয়রানি চলছে বলে বিজিএমইএর অভিযোগ।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে দেওয়া আলাদা দুটি চিঠিতে শুধু কার্টন খুলে পণ্য ওজন করে দেখা নয়, কাস্টমস এবং বন্ডের বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি অভিযোগ এনেছে বিজিএমইএ। বিশেষ করে বিশেষায়িত পোশাক ছাড়াও অন্যান্য পণ্য তৈরির জন্য কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। আর এখানেই কাস্টমস এবং বন্ডের হয়রানি বেশি হচ্ছে বলে অভিযোগ বিজিএমইএর।

অভিযোগ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘কাস্টমস একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এইচএস কোড নির্দিষ্ট করে দেওয়ার কারণে। আমাদের এখন নতুন অর্ডার আসছে, সেখানে নতুন নতুন অনেক অ্যাকসেসরিজ আসছে। এই অ্যাকসেসরিজে এইচএস কোডের জাঁতাকল সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। এর ফলে মাল ছাড়াতে দেরি হচ্ছে।

গার্মেন্টস: তৈরি পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকদের হার কমে যাওয়ার কারণ কী? - BBC News বাংলা

তিনি বলেন, ‘রপ্তানি করতে গেলে গ্রস ওয়েট এবং নেট ওয়েট নিয়েও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ কারণে আমরা কাস্টমসকে বলছি, এখন ক্রাইসিস পিরিয়ড, এখন আমরা যেটা পাচ্ছি সেটা অর্ডার নিচ্ছি। সে জায়গায় আপনারা যদি আমাদের সহযোগিতা না করেন সে ক্ষেত্রে রপ্তানিতে যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে সেটা মুখ থুবড়ে পড়বে।’

অবশ্য বিজিএমইএর এসব অভিযোগ মানছে না চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানিতে কম মূল্য দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকির পাশাপাশি ওভার ইনভয়েজ দেখিয়ে বিদেশে টাকা পাচারের বেশ কয়েকটি ঘটনা চিহ্নিত করেছে কাস্টমস এবং শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। শুল্ক ফাঁকি ও টাকা পাচার প্রতিরোধে কঠোর হওয়ায় গার্মেন্ট মালিকরা অভিযোগ জানাচ্ছে বলে দাবি কাস্টমস কর্মকর্তাদের।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস উপকমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন তদন্তে যে বিষয়টা পাচ্ছি, তা হলো মানি লন্ডারিংয়ের জন্য বিভিন্ন রপ্তানিকারক পণ্যের পরিমাণকে লুকানোর চেষ্টা চলছে। অর্থাৎ পণ্য রপ্তানির যে ঘোষণা দিচ্ছেন প্রকৃতপক্ষে তার চেয়ে বেশি কিংবা কম পণ্য রপ্তানি করছেন। মানি লন্ডারিং ইস্যুর সঙ্গে তারা জড়িত থাকতে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা গভীরভাবে কাজ করছি।’