স্বল্প আয়ের জনগণের দুর্ভোগ কমাতে মঙ্গলবার থেকে রাজধানী ঢাকাতে ট্রাকসেল শুরু করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। নগরীর ২৫ থেকে ৩০টি স্থানে এই ট্রাকসেল হবে।

এই ট্রাকগুলো থেকে প্রতিজন দুই কেজি ডাল, দুই কেজি আলু, দুই কেজি পেঁয়াজ ও দুই লিটার সয়াবিন তেল নিতে পারবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এতে সয়াবিন তেল ১০০ টাকা লিটার, প্রতি কেজি ডাল ৬০, পেঁয়াজ ৫০ এবং আলু ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে।

সোমবার (১৩ নভেম্বর) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় টিসিবি’র চেয়ারম্যানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্য সচিব বলেন, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ঢাকাতে ১৩ লাখ পরিবারকে ন্যায্যমূল্যে বিভিন্ন পণ্য দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি মঙ্গলবার থেকে ঢাকাতে ২৫ থেকে ৩০টি ট্রাক সেলে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করা হবে। এতে নতুন করে আরও ৯ হাজার পরিবার যোগ হবে।

সপ্তাহে কত দিন বিক্রি হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, শুক্র ও শনিবার বাদে প্রতিদিন বিক্রি হবে। আমরা যদি সংগ্রহ করতে পারি, তা হলে এভাবে বিক্রি করব। তবে বিভিন্ন দিন বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হবে। কারণ পুরো ঢাকাতে ৩০টি ট্রাক দিয়ে কভার করতে হবে। যাতে সব মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়।

টিসিবিতে তেলের লিটার ১০০, আলুর কেজি ৩০, পেঁয়াজ ৫০ টাকা

তিনি বলেন, ট্রাকসেলে যে কেউ দুই কেজি ডাল, দুই কেজি আলু, দুই কেজি পেঁয়াজ, দুই লিটার সয়াবিন তেল নিতে পারবেন। এই মুহূর্তে চিনি দেওয়া যাচ্ছে না। চিনি পাওয়া গেলে দেওয়া হবে।

টিসিবি কার্ডধারীদের এখন আলু দেওয়া হবে না জানিয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, কারণ জেলা প্রশাসকরা সোমবার থেকে সরকারি দাম অর্থাৎ ৩৬ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি নিশ্চিত করবে। তেল, চিনি, ডাল, আলু এসব পণ্য আমদানি করতে যেন ডলারের সমস্যা না হয় সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকার ভর্তুকি মূল্যে এসব পণ্য দিচ্ছে। প্রতিটি পণ্য অর্ধেক দামে দেওয়া হয়।

নতুন করে এই ট্রাক সেল কতদিন চলবে এ প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, আগে টিসিবি যে ট্রাক সেল করতো সেখান থেকে আমরা কিন্তু বেশি মানুষকে দিতে পারতাম না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে দেশে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেল। সেটা সামাল দেওয়ার জন্য তখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এক কোটি পরিবারকে টিসিবির মাধ্যমে কার্ড করে দেওয়া হয়। আমরা এখনও সেভাবে তাদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এখন সারা দেশের মানুষ এই সুবিধাটা পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলায় ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সব জেলায় এই কার্ড বিতরণ করা হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্য আমরা কমাতে পারিনি। আসলে আমরা কমাতে চাই। ঢাকা শহরে কিছু ভাসমান মানুষ আছে যাদের টিসিবির কার্ডের আওতায় আনতে পারি নাই। সেজন্য ঢাকা শহরে ট্রাকসেল দিতে যাচ্ছি। আশা করি এটা ভালোভাবে ব্যবস্থাপনা করা যাবে। কাল থেকে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাকে সেল শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে খাদ্যসামগ্রী যদি বেশি সংগ্রহ করতে পারি তাহলে ট্রাকসেলের সংখ্যা আরও বাড়বে। কতদিন চলবে সেটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। এটার সঙ্গে নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। আমি আশা করি জানুয়ারি থেকে এসব পণ্যের দাম কমে আসবে। যদি যথেষ্ট পরিমাণ কমে আসে তাহলে ট্রাকসেল থাকবে না। যদি মনে হয় চালানো দরকার তখন চলবে।

কার্ডধারীরা কি ট্রাক থেকে কিনতে পারবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা কার্ডধারী তারা এখান থেকে পণ্য নিতে পারবেন না। আমরা কার্ডধারীদের অনুরোধ জানাব, তারা যেন এখানে না আসেন।

টিসিবির কার্ড বাড়ানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের টিসিবির সক্ষমতা, আমদানির পরিস্থিতি কী রকম সেটার ওপর নির্ভর করে কার্ড বাড়ানো হবে। এককোটি পরিবার থেকে আপাতত এটা বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। যদি প্রয়োজন হয়, টিসিবির সক্ষমতা থাকলে বাড়ানো হবে। বর্তমানে চিনি দিতে পারছি না। এজন্য কার্ড বাড়ানোর কোনও চিন্তা নেই। তাই ট্রাকসেলের মাধ্যমে চেষ্টা করবো ঢাকাকে কাভার করতে।

তিনি বলেন, জানুয়ারিতে আমাদের দেশি পণ্য যখন বাজারে চলে আসবে তখন দাম নিম্নমুখী থাকবে। আর আমদানি পণ্য নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর। দুটি বিষয় আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে এক ডলারের দাম ও আন্তর্জাতিক পণ্যের দাম কী হচ্ছে।