![](https://bebsapati.com/wp-content/uploads/2023/09/gol-alu.jpg)
দেশে গোল আলুর উৎপাদন ও চাহিদা নিয়ে গোলমেলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসাবের মধ্যেই তথ্যের ফারাক দেখা যাচ্ছে। উৎপাদন–চাহিদার এমন হিসাবের মতো বাজারেও আলুর দাম অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। গত এক মাসে খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে কেজিতে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় পৌঁছেছে। যা প্রায় এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সরকার গত বৃহস্পতিবার আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি ৩৫-৩৬ টাকা (হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭) বেঁধে দিয়েছে। যদিও গতকাল শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজার, রায়েরবাজার ও মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ঘুরে বেঁধে দেওয়া দরে আলু বিক্রি হতে দেখা যায়নি।
কৃষিবিশেষজ্ঞদের মতে, পণ্যের উৎপাদন ও চাহিদার সঠিক হিসাব না থাকলে বাজারে কেউ কেউ অবৈধ সুযোগ নেয়। কর্তৃপক্ষও যথাযথভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আর বিভিন্ন সংস্থা যে পরিমাণ আলুর উৎপাদনের কথা বলছে, তাতে বাজারে এমন পরিস্থিতি হওয়ার কথা নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উৎপাদন বেশি হওয়ায় মৌসুমের শেষ সময়ে আলু পচে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এদিকে এত দিন আলুর দাম চাল-আটার তুলনায় কম থাকায় গরিবদের অনেকে আলু খাওয়া বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহে বাজারে চাল, আটা ও আলুর দাম প্রায় সমান হয়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে গরিবদের খাবার খরচে।
দেশে আলু যথেষ্ট ভালো উৎপাদন হয়েছে। এরপরও কেন আলুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।
আব্দুর রাজ্জাক, কৃষিমন্ত্রী
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দেশে আলু যথেষ্ট ভালো উৎপাদন হয়েছে। এরপরও কেন আলুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। আর এবার চালের উৎপাদন যথেষ্ট ভালো হয়েছে, আটার দামও কমছে। সরকারি গুদামে যথেষ্ট পরিমাণে চাল-গম রয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো।’
গোল আলুর উৎপাদন–চাহিদা
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এ বছর দেশে গোল আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ টন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আলু রপ্তানিবিষয়ক রূপরেখায় কৃষিমন্ত্রীর লেখায় ওই তথ্যের উল্লেখ রয়েছে।
দেশে চাহিদার তুলনায় ২৫ লাখ টন আলু বেশি আছে—এ তথ্য তুলে ধরে কৃষি মন্ত্রণালয় চলতি বছর আলু রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার টন বৃদ্ধিও করে। যদিও সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তো দূরে থাক, এ বছর রপ্তানি গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে দেশে এ বছর ১ কোটি ১১ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব বলছে, আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ টন।
দেশে আলুর চাহিদার হিসাবের ক্ষেত্রেও ফারাক দেখা যায়। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে বছরে আলুর চাহিদা ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টন। আবার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে দেশে আলুর চাহিদা ৮৯ লাখ টন। আর হিমাগার মালিক সমিতি মনে করে, দেশে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর দেশে আলু উৎপাদনের পরিমাণ, উৎপাদন খরচ ও বিপণনব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে গত আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে। সেখানে এ বছর আলুর উৎপাদন ও রপ্তানি অন্য বছরগুলোর তুলনায় কমেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত তিন বছরের তুলনায় দেশে হিমাগারে আলু রাখার পরিমাণ কমছে। গত বছর হিমাগারে আলু মজুত রাখা হয়েছিল ২৭ লাখ ৯ হাজার টন। যা দেশের মোট হিমাগারের ধারণক্ষমতার ৯২ শতাংশ। এবার তা ২৪ লাখ ৪২ হাজার টনে নেমে এসেছে।
সরকারের একেক সংস্থা আলুর উৎপাদন ও চাহিদার একেক ধরনের হিসাব দেয়, তা বড় ধরনের সমস্যা। এ কারণে দেশে আদৌ কতটুকু আলু আছে, রপ্তানি সম্ভব নাকি ঘাটতি আছে, তা বোঝা যায় না।
জাহাঙ্গীর আলম, অধ্যাপক, কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ হিমাগার সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের হিসাবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর আলুর উৎপাদন বেশ কমেছে। সাকুল্যে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টন আলু এবার উৎপাদিত হয়েছে। বাংলাদেশে আলুর চাহিদাও ৯০ লাখ টনের মতো। ফলে এবার আলু রপ্তানি কম হয়েছে। যে কারণে ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।’
কৃষিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আলু রোপণ শুরু হয় মূলত নভেম্বর মাসে, আর তা মাঠ থেকে তোলা হয় ফেব্রুয়ারিতে। হিমাগারে মজুত আলো জুলাই থেকে কমে আসতে থাকে, তখন দাম একটু বাড়ে। তবে সাধারণত আলুর কেজি গত এক যুগের মধ্যে ৪০ টাকার ওপরে ওঠেনি।
আলুর দাম ও খাবারের খরচে প্রভাব
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত সপ্তাহের হিসাবমতে, এক কেজি আলু ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রায়ের বাজার ও মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে প্রতি কেজি আলু ৪৫–৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
টিসিবির হিসাবমতে, বাজারে এখন এক কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা এবং সাদা খোলা আটার কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত এক মাসে মোটা চাল ও আটার দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমলেও আলুর দাম বেড়েছে।
সরকার গত বৃহস্পতিবার আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি ৩৫-৩৬ টাকা (হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭) বেঁধে দিয়েছে। যদিও শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজার, রায়েরবাজার ও মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ঘুরে বেঁধে দেওয়া দরে আলু বিক্রি হতে দেখা যায়নি।