শিশুদের খেলনায় ক্ষতিকর উচ্চমাত্রার বিষাক্ত ধাতু

বাংলাদেশে শিশুদের খেলনায় সিসা, পারদ ও ক্যাডমিয়ামসহ বিষাক্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে। পরীক্ষিত খেলনাগুলোর মধ্যে ৫৫ শতাংশই বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত। তাই শিশুদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতা গড়ে তোলা এবং অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

সোমবার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন—(এসডো) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। ‘ইনোসেন্স টাচড বাই শ্যাডোস: ইনভেস্টিগেটিং টক্সিক ক্যামিকেলস ইন টয়স’—শীর্ষক রিপোর্টে এ তথ্য উঠে আসে। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ এই গবেষণা পরিচালনা করে।

রিপোর্টে শিশুদের খেলনার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। রিপোর্টে শিশুদের খেলনার মধ্যে বিপজ্জনক ভারী ধাতু—বিশেষ করে সিসা, পারদ এবং ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে। খেলনায় পাওয়া গড় ঘনত্ব নিম্নরূপ :লেড-৬৫ দশমিক ৮৫ পিপিএম, যা নির্ধারিত সীমার প্রায় পাঁচ গুণের বেশি; পারদ-৩০ দশমিক ৬ পিপিএম, যা নির্ধারিত সীমার প্রায় চার গুণের বেশি; এবং ক্যাডমিয়াম-২৮ দশমিক ৬৫ পিপিএম, যা নির্ধারিত সীমার প্রায় ১৫ গুণের বেশি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসডোর চেয়ারপারসন ও সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ। তিনি খেলনায় সিসার উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, শিশুদের খেলনায় সিসার উপস্থিতি গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি করছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। শিশুদের খেলনা উত্পাদন, বিতরণ এবং ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের সিসা দূষণকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত এবং এই পণ্য শিশুদের জন্য নিরাপদ কি না, তা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এই ভারী ধাতুগুলোকে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যদিও ভারী ধাতুর উপস্থিতি প্রত্যেকের জন্য ক্ষতিকারক, তবে এটি ছয় বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। শিশুরা খেলনা হাতে এবং মুখে দেওয়ার ফলে সেখান থেকে বিষাক্ত কেমিক্যালের সংস্পর্শে আসে, যা তাদের স্নায়ুবিক বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও এসডোর কারিগরি উপদেষ্টা ড. মো. আবুল হাশেম বলেন, সিসা দূষণ বাংলাদেশে একটি মারাত্মক সমস্যা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। যা দেশের জনগণ এবং এর অর্থনৈতিক কল্যাণে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। সিসার বিষাক্ততা আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করছে এবং ভবিষ্যত্ প্রজন্মের সুন্দর সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ফেলছে। ব্যান টক্সিক্সের অ্যাডভোকেসি/ক্যাম্পেইন অফিসার থনি ডিজন বলেন, বেশির ভাগ চকচকে খেলনায় সিসার উপস্থিতি রয়েছে। ব্যাটারি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত খেলনা, এমনকি মার্বেলেও পারদ এবং ক্যাডমিয়ামের মতো ক্ষতিকর ভারী ধাতু রয়েছে। এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, সিসা, পারদ এবং ক্যাডমিয়াম প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত বিষাক্ত ধাতু, শিশুরা খেলনা হাতে পাওয়া মাত্র তা সবার আগে মুখে দেয়। খেলনায় থাকা ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে।

এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, খেলনায় ব্যবহূত রং মূলত ইন্ডাস্ট্রিয়াল পেইন্ট। কাজেই, যত দ্রুত সম্ভব ইন্ডাস্ট্রিয়াল রঙে সিসার সুনির্দিষ্ট মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে এবং তা নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রয়োগের প্রয়োজন। থিম প্রেজেন্টেশনটি উপস্থাপন করেন এসডোর রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাম্পেইন অ্যাসোসিয়েট শ্যানন ইফফাত আলম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *